logo

সান্তাড়ি ও বাংলার মিলিত একটা বাক্যে "জয় জহার মেলা"।"জয়"মানে জয়ী হওয়া,"জহার" মানে নমস্কার।

পুরোপুরি বাংলাতে বলতে হলে "জয় বা জয়ী নমস্কার মেলা"। বেশ কয়েক বছর ধরে আদিবাসী জন্য এই মেলা শুরু করেছে রাজ্য সরাকার। এই হেন
লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে এই বছর মেলার দুম করে রাজ্য সরকার আদিবাসী এলাকায় আমদানি করার সঙ্গে সঙ্গে 15টি জেলায় 102 টি ব্লকে 5লক্ষ করে,5কোটি 10লক্ষ টাকা ঘোষণা এবং তৎক্ষণাৎ আয়োজন। এত তৎপরতা কিসের!! কই বন্ধ হোস্টেল,ঠিক সময়ে স্কলারশিপ,সান্তাড়ি মিডিয়াম এর পরিকাঠামো,প্যারা টিচার,শিক্ষক নিয়োগের বেলায় তো এত তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।সান্তাড়ি মিডিয়ামের প্যারা টিচার নিয়োগ হচ্ছেনা টাকা নেই বলে। কয়েকটি কলেজ হোস্টেল, ছাত্রীনিবাস খোলা যাচ্ছে না টাকা নেই বলে।সত্যিই আদিবাসীরা ভূলিয়ে রাখার এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। এই জয় নমস্কার মেলার কি আদোও দরকার ছিল?? এই মেলার জন্য কারা কারা লাভবান হবে?? প্রশ্ন তুলেছেন আদিবাসী সমাজের একাংশ। এবং মেলা বয়কটের ও ডাক দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বলছে নাকি এই মেলায় সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে! যদি পাওয়াই যায় তবে কিছু দিন আগে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে কি কি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পাওয়া গেছে!নাকি সেটাও ছিল লোক দেখানি! অনেকেই মনে করছেন এই মেলাতে আদিবাসীদের কোনপ্রকার লাভ তো হবেই না উপরন্তু ক্ষতির ভাগটাই বেশি। আদিবাসীদের টাকা খরচ করে মেলা ভাবতেও কেমন যেন লাগছে।আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের এত পরিমাণ টাকা কি করে মেলায় খরচ করা হচ্ছে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন! এছাড়াও এই পর্ষদের টাকাতে ও নাকি রাজ্যে সরকার সাইকেল, মোবাইল,ট্যাপ,ধমসা,মাদল কেনে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে আদিবাসীদের উন্নয়ন কে আটকে রেখে! যেমন রাজ্যের বেশিরভাগ আদিবাসী হোস্টেল বন্ধ।বার বার ডেপুটেশন চিঠি চাপাঠি করেও লাভ হয়নি। হোস্টেল বন্ধ থাকার কারনে বহু আদিবাসী ছেলে মেয়ে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাজার দর অনুযায়ী ঠিক সময়ে ছাত্র ছাত্রীরা স্কলারশিপ পাচ্ছে না। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে আদিবাসী ছাত্র ছাত্রীদের প্রচুর সমস্যায় সম্মুখীন হচ্ছে। "সান্তাড়ি একাডেমী বোর্ড"গঠন না হওয়াই সান্তাড়ি মিডিয়াম পঠন পাঠন সহ পরিকাঠামো গত সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষক নিয়োগ না হওয়াই বেশির ভাগ সান্তাড়ি মিডিয়াম বিদ্যালয়ে নামমাত্র শিক্ষক দিয়েই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ছাত্র ছাত্রীরা। ভূমিজ,শব্বর সহ অন্যান্য আদিবাসীদের সামগ্রিক উন্নয়ন নামমাত্র।কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বলছে "শিক্ষা সবার অধিকার" কিন্তু শিক্ষা কিভাবে গ্রহণ করবে গরীব আদিবাসী ছাত্র ছাত্রীরা তার কোনো নির্দিষ্ট গাইড লাইন নেই গাঁয়ে ঘরে। "বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও" চারিদিকে স্লোগান দিচ্ছে কিন্তু বেটিরা কিভাবে বাঁচবে বা কিভাবে তাদের বাঁচানোর, পড়ানোর ব্যবস্থা সরকার করছে তার গাইড লাইন ও আদিবাসীদের কাছে নেই। বলাই বাহুল্য,যে কেন্দ্র রাজ্য সংঘাতে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় কেন্দ্রীয় একলব্য বিদ্যালয় হোস্টেল সহ গড়ে তুলতে প্রচুর গড়িমসি চলছে,যা অন্যান্য রাজ্যে এই বিদ্যালয় সকল আদিবাসী এলাকায় গড়ে উঠেছে এবং ঐ বিদ্যালয় থেকে প্রচুর ভালো ভালো ছাত্র ছাত্রী বেরোচ্ছে তাতে করে আমাদের রাজ্যের ছাত্র ছাত্রীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারনে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।
সামাজিক ও ধর্মীয় দিক থেকে দেখলেও সুকৌশলে অনেকটা পিছিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা পরিলক্ষিত। যেমন মুসলিম,হিন্দু ,শিখ ধর্মাবলম্বী, সম্প্রদায় মানুষদের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয় বিভিন্ন খাতে। কিন্তু এখানকার আদিম আদিবাসীদের ক্ষেত্রে তাদের বরাদ্দ টাকা অন্য (এর সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক নেই) প্রকল্পে অবাধে খরচ করা হচ্ছে।আর আদিবাসীদের জন্য নামমাত্র আদিবাসী উন্নয়নের টাকা খরচ হচ্ছে। আর এসবের মধ্যে আদিবাসী নেতা মন্ত্রীরা নীরব বধির অবস্থায় আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করছে বিধানসভা ও লোকসভায়।
এত সবের মধ্যে এখন রাজ্যের আদিবাসীদের সংরক্ষিত আসনে, অ-আদিবাসীরা জোরালো ও ঘোরালো থাবা বসিয়েছে তাতে আবার নাকি সরকার ও প্রশাসনের সরাসরি হাত রয়েছে। অপরদিকে রাজ্যের এক চালাক চতুর অর্থনৈতিক ভাবে সাবলীল এক সম্প্রদায় স্বাধীনতার 77 বছরে নাকি তারা OBC হয়েও তফশীল উপজাতি হতে চাইছে। তারাও নাকি আদিবাসী।
এই মতাবস্থায় লক্ষনীয় যে রাজ্য তথা দেশের অধিকাংশ অ-আদিবাসী গণের নজর আদিবাসীদের উপর পড়েছে। তাতে ধর্মান্তকরণ বলুন,বানিজ্য বলুন,কলকারখানা বলুন,জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বলুন, জঙ্গল কেটে চোরাকারবারি বলুন, রিসোর্ট বলুন,খনি বলুন, উচ্ছেদ বলুন,সুলভ শ্রমিক বলুন,সরকার বলুন, সবাই সবেতেই আদিবাসীদের উপরে কড়া নজরদারি রেখেছে। যে যখন পাচ্ছে সুযোগ সুবিধা লুটে নিচ্ছে।
তাই আদিবাসীদের মধ্যে অবস্থিত নিজ নিজ জাতি ও সমাজের ধারাবাহিকতা কে ধরে রাখতে যেমন করেই হোক শিক্ষিত হোন,আপনার চারপাশে সব সময় আপনার সমাজ ও জাতি কে শেষ করার চক্র চলছে। যা আপনাকেই কৌশলে প্রতিহত করতে হবে। যে শিক্ষায় আপনার সমাজ,আপনার ধর্ম, আপনার জাতি,আপনার সংস্কৃতি বেঁচে থাকতে শেখায় সেই শিক্ষা আপনার কাছেই বিদ্যমান।পাশাপাশি আপনাকে বুঝতে হবে যে আমাকে যে বা যারা উন্নয়নের নাম করে সার্বিক অনুন্নয়নের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সেটা অনুধাবন করুন ও আপনি আপনার সমাজ ও জাতিকে সঠিক পথ দেখান। "ভিক্ষা ছেড়ে শিক্ষা"ই যুব সমাজকে বেশি আগ্রহী করুন। আপনার সমাজ,আপনার জাতি আপনির সংস্কৃতি, আপনার শিক্ষা, আপনার যুব সমাজ,আপনার কর্ম ও ধর্ম আপনিই সর্বাগ্রে জতন ও সংরক্ষণ করতে পারবেন।
আদিবাসী!আপনার জায়গা আপনিই ভাবুন জয় নমস্কার মেলার কি আদোও প্রয়োজন আছে!!ধমসা মাদল কেনার টাকা কি আদোও গ্রাম্য ষোলো আনার নেই! যেখানে জল জঙ্গল জমিন আমাদের সেই জায়গাই দাড়িয়ে জাহের থান মাঝি থানের কি আদও ঘেরা ঘিরি পাট্টার প্রয়োজন!যদি প্রয়োজন মনে করেন তবে সত্যিই ধরে নেওয়া যায় আদিম আদিবাসীর সেন্টিমেন্ট ও ইতিহাস থেকে বহু দূরে সরে এসেছেন। আমরা দিনে দিনে ভুলে যাচ্ছি তিলকা মুর্মুর বিদ্রোহ,ভুলে যাচ্ছি "উলগুলান",ভুলে গেছি ,"হুল দিবস", ভুলে যাচ্ছি "চূওয়াড় বিদ্রোহের"

4
32 views